২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে, কারণ পেঁয়াজ দৈনন্দিন রান্নার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।
বাজারে এই উর্ধ্বগতি ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী মূলত সরবরাহ কমে যাওয়া, সীমান্ত পরিস্থিতি এবং পরিবহন ব্যয়ের বৃদ্ধি-এর কারণে হয়েছে।
ঢাকাসহ বড় শহরে পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বেড়েছে
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজার যেমন মিরপুর, কাওরান বাজার, জিগাতলা এবং মোহাম্মদপুর-এ পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
-
দেশি পেঁয়াজ কেজি: ৭৫–৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০–১২০ টাকা
-
ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি: ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৯৫–১০০ টাকা
ক্রেতাদের অভিযোগ, দৈনন্দিন রান্নার জন্য পেঁয়াজ অপরিহার্য, তাই এই দাম বৃদ্ধিতে পরিবারের মাসিক বাজেটে চাপ তৈরি হচ্ছে।
এক গৃহিণী বলেন,
“প্রতিদিন রান্নায় পেঁয়াজ লাগে। এখন যে দামে কিনছি, তাতে আমাদের খাবারের তালিকাতেও কাটছাঁট করতে হবে।”
সরবরাহ কমে যাওয়াই মূল কারণ
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন:
-
সীমান্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি ধীরগতিতে চলছে
-
পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও মুদ্রার ওঠানামা বাজারে প্রভাব ফেলছে
-
পাইকারি দামে ১৫–২০ টাকা বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে দামও বেড়ে গেছে
শ্যামবাজারের এক পাইকার জানান,
“বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ এখন অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম আবার স্থিতিশীল হবে।”
ক্রেতাদের ভোগান্তি
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতারা বলছেন, দিনে দিনে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, পেঁয়াজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি তাদের মাসিক বাজেট সংকটে ফেলছে।
এক ক্রেতা জানান,
“পেঁয়াজ ছাড়া রান্না কল্পনা করা যায় না। কিন্তু দামের এই উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ছে।”
এই পরিস্থিতি বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবার এবং গ্রামাঞ্চলের অসহায় ভোক্তাদের জন্য চাপ বৃদ্ধি করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ মনিটরিং টিম মাঠে কাজ শুরু করেছে।
-
পাইকারি বাজারগুলোতে সরবরাহ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে
-
প্রয়োজনে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে
সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন,
“অন্যায়ভাবে কেউ দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমদানি বাড়ালে বাজার খুব দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।”
বাজার বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মৌলিক খাদ্যপণ্যের বাজারে স্বচ্ছতা ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
তাদের প্রস্তাবনা:
-
অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো
-
সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা
-
আমদানি নীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা
এতে ভবিষ্যতে এমন অস্থিরতা ও দামের উর্ধ্বগতি মোকাবেলা করা সহজ হবে।
ভোক্তাদের জন্য কার্যকর পরামর্শ
বর্তমান দামের অস্থিরতায় ভোক্তারা কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে পারেন:
-
হঠাৎ দামের ঊর্ধ্বগতি দেখে অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনবেন না
-
বাজারে যাচাই-বাছাই করে দাম তুলনা করে কেনাকাটা করা
-
বিকল্প উপকরণ ব্যবহার করে বাজেট সামলানো
-
নকল বা পচা পেঁয়াজ থেকে সতর্ক থাকা
এছাড়া, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম পুনরায় স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ও নজরদারি
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি নিয়মিত সরবরাহ মনিটরিং, আমদানি পরিকল্পনা এবং স্থানীয় উৎপাদন উন্নয়ন নিশ্চিত করে, তাহলে বাজারে এমন অস্থিরতা কমানো সম্ভব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
-
স্থানীয় উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা শক্ত করা
-
পাইকারি ও খুচরা বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা
-
কৃষক ও উদ্যোক্তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা
এই পদক্ষেপগুলো বাজারকে স্থিতিশীল এবং ভোক্তাদের জন্য সহজলভ্য করতে সহায়ক।
উপসংহার
২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বেড়েছে, মূলত সরবরাহ কমে যাওয়া ও সীমান্ত পরিস্থিতি এর কারণে।
প্রভাবিত পক্ষ:
-
দৈনন্দিন রান্নার জন্য ক্রেতা
-
মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার
-
পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা
মূল সমাধান:
-
বাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীল আমদানি নীতি
-
স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি
-
কৃষি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের সতর্কতা এবং সরকারী পদক্ষেপ combined হলে দাম দ্রুত স্থিতিশীল হবে।
পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা থাকলেও, সতর্কতা, সচেতনতা এবং পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ভোগান্তি কমানো সম্ভব।











Leave a Reply