Advertisement

দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং আবারও বাড়ছে: সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পকারখানায় চরম ভোগান্তি

Electricity loadshedding in Bangladesh causing disruption in daily life and industrial sectors.

২০২৫ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং পুনরায় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

দিনের বেলায় সাধারণ মানুষ এবং শিল্পকারখানায় বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ২–৩ ঘণ্টা পর্যন্ত, কখনও কখনও রাতে ৪ ঘণ্টার বেশি হতে পারে। ফলে দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা ও শিল্প উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো জ্বালানি সংকট এবং উৎপাদন কমে যাওয়া।


ঢাকা ও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা যেমন মিরপুর, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, রামপুরা এবং পুরান ঢাকা-তে দিনে একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে, যা জনজীবনে স্থবিরতা তৈরি করছে।

চট্টগ্রাম নগরীতেও একই সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে আগ্রাবাদ, হালিশহর, চান্দগাঁও ও বাকলিয়ায়।

একজন বাসিন্দা বলেন:

“রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘুম ভেঙে যায়। গরমে থাকা যায় না, আবার শিশু-বয়স্কদেরও কষ্ট হয়। ঘর-বাড়ির কাজ সব আটকে যায়।”


শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, স্টিল ও ক্ষুদ্র শিল্পাঞ্চলের মালিকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ২–৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো জেনারেটর চালানোর জন্য অতিরিক্ত ডিজেল কিনতে বাধ্য হচ্ছে, যা লাভ কমাচ্ছে।

এক শিল্প মালিক বলেন:

“জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়তি যে জেনারেটর চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং চললে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে এক্সপোর্ট অর্ডারও ঝুঁকির মুখে পড়বে।”


লোডশেডিংয়ের কারণ

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১২,০০০ মেগাওয়াট, যেখানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১০,০০০ মেগাওয়াট

মূল কারণগুলো হলো:

  1. কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ কম

  2. গ্যাস চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস

  3. রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কয়েকটি বড় কেন্দ্র বন্ধ

  4. শীতকালে কয়লা আমদানিতে ধীরগতি

ফলস্বরূপ, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।


সাধারণ মানুষের ভোগান্তি

লোডশেডিংয়ের কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

  • অনলাইন ক্লাস ও ব্যাচ কোচিংয়ে বিঘ্ন

  • অফিস ও দোকানপাটে সমস্যা

  • গৃহস্থালির কাজ স্থগিত

এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন:

“রাতে পড়তে বসলে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। মোবাইল চার্জও থাকে না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে খুব সমস্যা হচ্ছে।”

বিক্রেতাদের অভিযোগ, ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ না থাকায় দোকানদারি করা কঠিন হচ্ছে।


সরকারি উপদেষ্টার বক্তব্য

সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত–সম্পর্কিত এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সাময়িক

  • গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে

  • কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্রুত চালু করা হচ্ছে

  • আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কয়লা আমদানিতে গতি বাড়ানো হচ্ছে

  • জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত এলএনজি (LNG) আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে

তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে লোডশেডিং ধীরে ধীরে কমে আসবে।


বিশেষজ্ঞদের মতামত

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের পরামর্শ:

  1. বিকল্প জ্বালানি উৎস বৃদ্ধি

  2. সোলার ও রিনিউএবল এনর্জিতে দ্রুত বিনিয়োগ

  3. গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া

এসব পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে এমন সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।


সাধারণ মানুষের জন্য পরামর্শ

লোডশেডিংয়ে দৈনন্দিন জীবনের ক্ষতি কমাতে সাধারণ মানুষ কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন:

  • মোবাইল ও ডিভাইস আগেই চার্জ করা

  • ঘরে জরুরি লাইট বা পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার

  • রেফ্রিজারেটরে অতিরিক্ত খাবার না রাখা

  • গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিকল্প সময় পরিকল্পনা করা


উপসংহার

২০২৫ সালের নভেম্বর থেকে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে।

  • সাধারণ মানুষ ও শিল্পকারখানায় ভোগান্তি বৃদ্ধি

  • জ্বালানি সংকট ও উৎপাদন কমে যাওয়া মূল কারণ

  • সরকার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি সাময়িক এবং স্বাভাবিক হবে

ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, বিকল্প জ্বালানি উৎস ও রিনিউএবল বিনিয়োগ নিশ্চিত করলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *