Advertisement

১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান: বিএনপির প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর দেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরছেন। দলীয় সূত্র অনুযায়ী, তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নির্ধারিত ফ্লাইটে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন

তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলটি এই ঘটনাকে শুধু একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখছে।


ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে বিএনপির বিশেষ আয়োজন

বিএনপি সূত্র জানায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে স্মরণীয় করে রাখতে দলের পক্ষ থেকে বিশেষ কর্মসূচি ও আয়োজন গ্রহণ করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, এই প্রত্যাবর্তন যেন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়—সেই লক্ষ্যেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, দলের প্রত্যাশা হলো এই প্রত্যাবর্তন অতীতের সব রাজনৈতিক নজিরকে ছাড়িয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতেও যেন এমন ঘটনা বিরল হয়ে থাকে। সে কারণেই বিএনপি অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুসংগঠিতভাবে পুরো বিষয়টি পরিচালনা করতে চায়।


অভ্যর্থনা কমিটি ও প্রস্তুতির সার্বিক চিত্র

তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে বিএনপি একটি বিশেষ অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সালাহউদ্দিন আহমদ নিজেই। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে।

এই প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন—

  • বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

  • দলটির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর পাভেল

  • তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামছুল ইসলাম

পরিদর্শনকালে তারা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে সম্ভাব্য চলাচলপথ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং লজিস্টিক সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।


বিমানবন্দর থেকে যাত্রাপথ ও সম্ভাব্য গন্তব্য

বিমানবন্দর পরিদর্শনের পর বিকেল চারটার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, তারেক রহমান বিমানবন্দরে কোথায় অবতরণ করবেন, কোথা থেকে গাড়িতে উঠবেন এবং কোন কোন রাস্তা ব্যবহার করে তিনি গন্তব্যে যাবেন—সবকিছু সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে প্রথমে এভারকেয়ার হাসপাতালে যেতে পারেন। কারণ, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তাঁর মা খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বিমানবন্দর ও হাসপাতালের আশপাশে সম্ভাব্য সংবর্ধনা স্থানের কথাও ভাবা হচ্ছে।


নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ

তারেক রহমানের নিরাপত্তা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করেছে দলের নিরাপত্তা টিম।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন এবং কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়—সে লক্ষ্যে সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।


গুলশানে অবস্থান করবেন তারেক রহমান

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন। এই বাসার পাশেই অবস্থিত বিএনপির ঐতিহাসিক বাসভবন ‘ফিরোজা’, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া।

এই এলাকায় তারেক রহমানের অবস্থান ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে জানা গেছে।


রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থানের পর তাঁর প্রত্যাবর্তন বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি ও রাজনৈতিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—

  • বিএনপির নেতৃত্ব কাঠামো আরও সক্রিয় হতে পারে

  • দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি আসতে পারে

  • মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে পারে

একই সঙ্গে এই প্রত্যাবর্তন দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও নতুন আলোচনা ও সমীকরণ তৈরি করতে পারে।


নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও প্রত্যাশা

তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করছেন।

নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতিতে দল আরও সুসংগঠিত হবে এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি নতুন গতি পাবে।


সামনে কী হতে পারে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর ধাপে ধাপে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারেন। তবে শুরুতে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে থাকার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন।

পরবর্তী সময়ে দলীয় সভা, নীতিনির্ধারণী আলোচনা এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


উপসংহার

১৭ বছরের দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া ব্যাপক প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সাংগঠনিক পরিকল্পনা এই প্রত্যাবর্তনের গুরুত্বকেই তুলে ধরছে।

এখন দেখার বিষয়, এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনে এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলায় কতটা প্রভাব ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *